নাইট রাইডার্সের রান তখন ৯ উইকেটে ৯৫। জয়ের জন্য তখনও প্রয়োজন ১৭ রান। ক্রিজে রয়েছেন আন্দ্রে রাসেলের মতো বিধ্বংসী ব্যাটার। এক ওভার আগেই প্রচণ্ড চাপের মুখে ম্যাচের সেরা বোলার যুজবেন্দ্র চাহালকে দুটি ছক্কা ও একটা চার হাঁকিয়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছেন। নাইট রাইডার্স সমর্থকরাও রাসেলকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছিল। ১৬তম ওভারে মার্কো জানসেনের প্রথম বলেই যাবতীয় স্বপ্ন শেষ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে ভেঙে দেয় রাসেলের উইকেট। নাটকীয় ম্যাচে ১৬ রানে জয় পাঞ্জাব কিংসের। একই সঙ্গে ভেঙে গেল ১৬ বছরের পুরনো রেকর্ড।
২০০৯ সালে ১১৬/৯ রানের পুঁজি নিয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবকে হারিয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস। জয়ের জন্য ১১৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব ২০ ওভারে তোলে ৯২/৮। এতদিন পর্যন্ত এটাই ছিল পুরো ম্যাচে সর্বনিম্ন রানের পুঁজি নিয়ে জেতার রেকর্ড। পাঞ্জাবের হাতেই ভাঙল সেই রেকর্ড। প্রথম ব্যাট করে পাঞ্জাব কিংস ১৫.৩ ওভারে ১১১ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে নাইট রাইডার্স ১৫.১ ওভারে তোলে ৯৫। দুরন্ত বোলিং করে ম্যাচের সেরা যুজবেন্দ্র চাহাল।
চণ্ডীগড়ের মুল্লানপুরের ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাঞ্জাব কিংস অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ার। ভাল শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য ও প্রভসিমরন সিং। ৩.১ ওভারে ওঠে ৩৯। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রিয়াংশ আর্যকে (১২ বলে ২২) ফেরান হর্ষিত রানা। ২ বল পরেই তুলে নেন শ্রেয়স আয়ারকে (২ বলে ০)। নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন অধিনায়ক শ্রেয়সের পুরনো দলকে জবাব দেওয়ার ছিল। কিন্তু ব্যর্থ পাঞ্জাব কিংস অধিনায়ক।
চতুর্থ ওভারেই হর্ষিতের জোড়া ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়ে পাঞ্জাব। পরের ওভারেই বরুণ চক্রবর্তী ছিটকে দেন জশ ইংলিসের স্টাম্প (৬ বলে ২)। পাঞ্জাবের চাপ আরও বেড়ে যায় পাওয়ার প্লে–র ওভারের শেষ বলে প্রভসিমরন সিং ফিরে যাওয়ায়। ১৫ বলে ৩০ রান করে হর্ষিত রানার বলে রমনদীপের হাতে ক্যাচ দেন প্রভসিমরন। এরপর পাঞ্জাবের ইনিংসে ধস নামান নাইট স্পিনাররা। ম্যাক্সওয়েলকে (১০ বলে ৭) ফেরান সুনীল নারাইন। সূর্যাংশ শেদগে (৪ বলে ৪) ও মার্কো জানসেনকে (২ বলে ১) ফেরান সুনীল নারাইন। নেহাল ওয়াধেরা (৯ বলে ১০) আনরিখ নর্খিয়ের শিকার। ১৫.৩ ওভারে মাত্র ১১১ রানে গুটিয়ে যায় পাঞ্জাব। ২৫ রানে ৩ উইকেট নেন হর্ষিত রানা। বরুণ ২১ রানে ও সুনীল ১৪ রানে ২টি উইকেট নেন।
জয়ের জন্য মাত্র ১১২ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে নাইট রাইডার্সও শুরুতেই ধাক্কা খায় প্রথম ওভারের শেষ বলে কুইন্টন ডিকককে (৪ বলে ২) ফেরান জেভিয়ের বার্টলেট। পরের ওভারেই সুনীল নারাইনকে (৪ বলে ৫) তুলে নেন মার্কো জানসেন। শুরুর ধাক্কা সামলে নাইট রাইডার্সকে টেনে নিয়ে যান অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে ও অঙ্গকৃষ রঘুবংশী। অস্টম ওভারে খেল শুরু যুজবেন্দ্র চাহালের। রাহানেকে (১৭ বলে ১৭) তুলে নিয়ে জুটি ভাঙেন। দশম ওভারে ফেরান অঙ্গকৃশ রঘুবংশীকে (২৮ বলে ৩৭)। বেঙ্কটেশ আয়ারকে (৪ বলে ৭) তুলে নেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। দ্বাদশ ওভারে পরপর ২ বলে রিঙ্কু সিং (৯ বলে ২) ও রমনদীপ সিংকে (১ বলে ০) ফেরান চাহাল। এই ধাক্কা আর সামলাতে পারেনি নাইট রাইডার্স।
১৩তম ওভারে চাহালের বলে ২টি ছক্কা ও ১টি চার মেরে চাপ কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন আন্দ্রে রাসেল (১১ বলে ১৭)। পরের ওভারেই বৈভব আরোরাকে (০) তুলে নেন অর্শদীপ সিং। এরপরই মার্কো জানসেন চরম আঘাত হানেন নাইট শিবিরে। দুরন্ত বোলিং করে ২৮ রানে ৪ উইকেট নেন চাহাল। ১৭ রানে ৩ উইকেট মার্কো জানসেনের।