দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই ভুলে গেছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা। ম্যাচ থাকলেই পরাজয়ের আতঙ্ক গ্রাস করে। শুধু কি সমর্থকদের? কোচ অস্কার ব্রুজোকেও। তবু তিনি যে সেনাপ্রধান। তাঁকে কি আর ভেঙে পড়লে চলবে? একঝাঁক ফুটবলার চোটের কবলে। বাকিদের ওপর আস্থা হারাননি। কোচের আস্থার মর্যাদা দিলেন পিভি বিষ্ণুরা। ঘরের মাঠে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জয় তুলে নিয়ে প্রথম পর্বের পরাজয়ের মধুর প্রতিশোধ নিল ইস্টবেঙ্গল। লাল–হলুদের জয় এলে ২–১ ব্যবধানে।
কেরালা ব্লাস্টার্সকে দেখলেই যেন জ্বলে ওঠেন পিভি বিষ্ণু। প্রথম পর্বের ম্যাচে তাঁর গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু লাল–হলুদ রক্ষণ বিষ্ণুর সেই গোল ধরে রাখতে পারেনি। ২–১ ব্যবধানে হারতে হয়েছিল। ফিরতি ম্যাচে অবশ্য বিষ্ণুর গোলের মান রাখলেন হিজাজি মাহেররা। এদিন রক্ষণকে দুর্দান্ত নেতৃত্ব দিলেন এই মরোক্কান ডিফেন্ডার।
প্রথম একাদশের একঝাঁক ফুটবলার না থাকায় কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে অন্যভাবে দল সাজিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো। রক্ষণে হিজাজি মাহেরের সঙ্গে লালচুংনুঙ্গা। জিকসন সিংকে সাইডব্যাকে নিয়ে এসেছিলেন। অন্যপ্রান্তে নিশু কুমার। কার্ড সমস্যা মিটিয়ে মাঝমাঠে সৌভিক। ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট ছিল কেরালা ব্লাস্টার্সের। ২ মিনিটেই বাঁদিক থেকে জিকসনকে টপকে বিপজ্জনক সেন্টার করেছিলেন নোয়া। বল বিপদমুক্ত করেন হিজাজি মাহের। এরর আক্রমণ প্রতিআক্রমণে খেলা জমে ওঠে। ২১ মিনিটে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ক্লেইটন সিলভার দুর্দান্ত থ্রু ধরে ডানদিক থেকে ঢুকে গিয়ে গোল করেন বিষ্ণু।
এগিয়ে যাওয়ার পর আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ইস্টবেঙ্গল। অন্যদিকে, সমতা ফেরানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে কেরালা ব্লাস্টার্স। ৩৪ মিনিটে বিপজ্জনকভাবে ইস্টবেঙ্গল বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন আদ্রিয়ান লুনা। কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেন লালচুংনুঙ্গা। ৩৭ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। ৪০ গজ দুর থেকে দুর্দান্ত শট নিয়েছিলেন রিচার্ড সেলিস। বল পোস্টে লেগে ফিরে আসে। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে কোনও দলই আর গোল করার মতো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।
প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে ইস্টবেঙ্গলকে অনেক বেশি ছন্দে দেখা যায়। বেশ কয়েকটা সুযোগও তৈরি করেছিল। ৫১ মিনিটে বক্সের ভেতর বিষ্ণুর পাস থেকে জায়গা করে নিয়ে গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন দিয়ামানতাকোস। বল সরাসরি কেরালা ব্লাস্টার্স গোলকিপারের হাতে চলে যায়। ৬৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বাঁপায়ে জোরালো শট নিয়েছিলেন মহেশ সিং। বল সাইড নেটে গিয়ে আছড়ে পড়ে। ৭১ মিনিটে একক প্রয়াসে বল নিয়ে ঢুকে গিয়েছিলেন বিষ্ণু। কেরালা গোলকিপার শচীন গোলমুখ ছোট করে নিশ্চিত গোল বাঁচান। পরের মিনিটেই ব্যবধান বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। মহেশ সিংয়ের কর্নার থেকে হেডে গোল করে ইস্টবেঙ্গলের জয় নিশ্চিত করেন হিজাজি মাহের। শুধু গোল করাই নয়, এদিন লাল–হলুদ রক্ষণকে দারুণ ভরসা দেন মরোক্কান এই ডিফেন্ডার।
৮৪ মিনিটে ব্যবধান কমায় কেরালা ব্লাস্টার্স। লুনার ফ্রিকিক হেড করে বিপদমুক্ত করেন হিজাজি মাহের। জটলার মধ্যে বল পেয়ে দুরন্ত হাফভলিতে গোল করেন দানিশ ফারুক। ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার প্রভসুখন গিলের দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। ইনজুরি সময়ের ২ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। মহেশ সিংয়ের সেন্টারে ড্রপ হেড করেছিলেন ক্লেইটন। বল অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বাকি সময়ে কোনও দলি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। কেরালাকে হারিয়ে ১৭ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট হল ইস্টবেঙ্গলের।
আরও পড়ুনঃ অনুষ্টুপ, ঋদ্ধিমানের মতো তারকাও চূড়ান্ত ব্যর্থ, বাংলা গুটিয়ে গেল ১২৫ রানে, চালকের আসনে হরিয়ানা
আরও পড়ুনঃ চোটের জন্য ম্যাচ ছেড়ে দিলেন জকোভিচ, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে জেরেভ