যদি প্রীতি ম্যাচ আয়োজন না হয়, তাহলে আর আর্জেন্টিনার জার্সিতে দেশের মাঠে নামা হবে না। একটা অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দেশে মাঠে খেলতে নেমেছিলেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে জোড়া গেল করে দেশের মাঠে জীবনের শেষম্যাচ স্মরণীয় করে রাখলেন। বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার জয় এল ৩–০ ব্যবধানে।
২০০৫ সালের ৯ অক্টোবর এস্তাদিও মনুমন্তোলে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দেশের মাটিতে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। সেটাও ছিল বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ। ২০ বছর পর সেই স্টেডিয়ামেই দেশের মাটিতে জীবনের শেষ ম্যাচ খেললেন। এটাও বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ। স্টেডিয়াম ও মঞ্চ এক হলেও অনুভূতিটাই শুধু আলাদা। মেসির চোখে যেমন জল, গ্যালারির দর্শকদের চোখেও। ‘ওলে, ওলে, ওলে…মেসি, মেসি, মেসি!’ গানে দেশের মাঠে শেষবারের মতো মেসিকে বিদায় জানাল এস্তাদিও মনুমন্তোলে।
ঘরের মাঠে মেসির শেষ ম্যাচেও তাঁকে অন্যরকম বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন সতীর্থরা। তাই শুরু থেকেই ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নিজেদের ছাপিয়ে গেলেন হুলিয়ান আলভারেজ, লিয়ান্দ্রো পারদেসরা। অবশেষে সেই কাঙ্খিত গোলটি এল ম্যাচের ৩৯ মিনিটে। তাও আবার মেসির পা থেকে। ক্যানভাস তৈরি করেছিলেন লিয়ান্দ্রো পারদেস। মাঝমাঠে বল ধরে লম্বা পাস বাড়ান হুলিয়ান আলভারেজকে। ডানপ্রান্ত গিয়ে ভেতরে ঢুকে ভেনেজুয়েলার এক ডিফেন্ডারকে ডজ করে বক্সের মাঝে দাঁড়ানো মেসিকে দেন আলভারেজ। মেসির সামনে গোলকিপারসহ ভেনেজুয়েলার দুই ডিফেন্ডার। শট না নিয়ে মাপা চিপ। বল বাতাসে ভাসতে ভাসতে জালে।
দৃষ্টিনন্দন গোল। দেশের জার্সি গায়ে গোল পেলেন ৩২৪ দিন পর। আর এবারের বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে ৭ নম্বর গোল। এই গোলই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল ৭ গোল করে শীর্ষে থাকা লুইস দিয়াজের পাশে। ৭৯ মিনিটে দিয়াজকে পেছনে ফেললেন মেসি। এই গোলেরও কারিগর সেই আলভারেজ। ডানপ্রান্ত থেকে আলভারেজ সেন্টার করেছিলেন। বক্সের মাঝে দাঁড়িয়ে বাঁপায়ের নিখুঁত স্পর্শে জালে পাঠান মেসি।
মেসির এই গোলের আগেই দ্বিতীয় গোল পেয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ৭৬ মিনিটে নিকো পাজের সেন্টার থেকে হেডে গোল করেন লাউতারো মার্টিনেজ। এই গোলের উৎস মেসির পা থেকে। ফ্রিকিক থেকে তিনি পাজকেই পাস বাড়িয়েছিলেন। দেশের মাঠে জীবনের শেষ ম্যাচে হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন মেসি। ৮৯ মিনিটে রড্রিগো দি পলের পাস থেকে বল পেয়ে জালে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ভিএআর–এর মাধ্যমে অফসাইডের জন্য গোলটি বাতিল করেন রেফারি।
বিশ্বকাপ খেলা আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার। ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ম্যাচটা ছিল নিয়মরক্ষার। কিন্তু মেসিকে নিয়ে আবেগ পৌঁছে গিয়েছিল অন্যমাত্রা। গ্যালারিতে মেসির পরিবার। রোকুজ্জোকে বারবার দেখা গেছে। জাতীয় সঙ্গীতের সময় তিন সন্তানকে নিয়ে সতীর্থদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি। আর্জেন্টাইন গায়িকা ইউজেনি কুয়েভেদো যখন জাতীয় সঙ্গীত গাইছিলেন, স্বাভাবিক ছিলেন মেসি। কিন্তু ম্যাচ শুরুর সময় চোখে জল। দর্শকদের মতো আবেগ বাধ মানেনি তাঁর চোখও।